• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

নওগাঁয় মান্দায় চলছে কৃষি জমিতে পুকুর খনন, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ সড়ক: প্রশাসন নিরব 

  • ''
  • প্রকাশিত ০৯ মে ২০২৪

এম এ রাজ্জাক, নওগাঁ:

প্রশাসনের অভিযানের পরও নওগাঁর মান্দায় থামছে না মাটি ব্যবসায়ীরা। লোক দেখানো ভ্রাম্যমান আদালতের অীভিযানে দু’একটি জরিমানাকে তারা তুচ্ছ মনে করে দেদারসে কেটে যাচ্ছে মাটি। দিনে ও রাতে অপরিকল্পিত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষি জমিতে পুকুর খননের কাজ। আর শ্রেণি পরিবর্তন না করেই পুকুর খনন করায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ।

অন্যদিকে নিয়ম না মেনে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কসহ গ্রামীণ পাঁকা সড়কের উপর দিয়ে ট্রাক্টরের মাধ্যমে মাটি পরিবহনের কারণে নষ্ট হচ্ছে সড়ক। এমন দৃশ্য এখন উপজেলার অধিকাংশ স্থানেই। আর পাঁকা সড়কের উপর মাটি পড়ে থাকার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে দেদারসে মাটি কাটা হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়াই টপসয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছেন মাটি ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ স্বল্পমূল্যে মাছ চাষের কথা বলে শ্রেণি পরিবর্তন না করেই পুনঃখননের অজুহাত দিয়ে বড় বড় পুকুর কাটছে।

জমিতে একের পর এক এক্সেভেলেটর মেশিন দিয়ে মাটি কাটছেন নির্বিঘ্নে। অভিযোগ, অনেককে ম্যানেজ করে মাটি কাটছে তারা। গভীর রাতে মাটি কেটে ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব মাটি পরিবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে অন্তত ৫/৭ ট্রাক। উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন এমন চিত্র এলাকাবাসীর চোখে পড়লেও প্রশাসনের নজরে আসছে না।

অন্যদিকে ট্রাক্টরে করে খোলা অবস্থায় মাটি পরিবহনের ফলে সড়কে পড়ছে মাটি। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে সড়ক। ট্রাক্টর কাঁচা-পাকা যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে সে সব রাস্তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাকা রাস্তার ওপর মাটি পড়ে পড়ে আচ্ছাদন তৈরি করছে। এর ফলে রাস্তা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি অীন্য যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। একইসাথে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসিদের। নেই কোনো প্রশাসনিক নজরদারি। কৃষি পণ্য উৎপাদনে এ জেলার সুনাম থাকলেও প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুম এলেই ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার হিড়িক পড়ে যায়। আশপাশের জমির মাটি কেটে নেয়ায় অনেকেই আবার বাধ্য হয়ে নিজের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।

গোপন সূত্রে জানা গেছে, যারা ভূমি অফিসের লোকদের সঙ্গে আঁতাত করে পুকুর খনন কিংবা মাটি কাটছে কিংবা কৃষি জমি মাটি দিয়ে ভরাট করছে তারা থাকছে আইনের বাইরে। আর যারা আঁতাত না করে পুরাতন পুকুর সংস্কারের লক্ষ্যে নতুন করে খনন করছেন সেই জায়গায় গিয়ে জরিমানা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তারা। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ অভিযানের সময় জব্দকৃত মাটি খননের উপকরণগুলো উপজেলা ভূমি অফিসে ফেরত নিতে গেলে ওই ব্যক্তিরও অর্থদণ্ড করা হচ্ছে। প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় ভূক্তভোগীরা। এছাড়া প্রকাশ্যে পুকুর খননের মহোৎসবে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের চককেশব শাহানা পাড়া গ্রামের মৃত রমজান শাহানা'র  ছেলে মামুন ও বাবুল ও সহযোগী শহিদুল ইসলাম  ফসল না হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন না করেই গাবতলি শান্তা ব্রিজ থেকে দক্ষিনে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বাঁধের পূর্ব পাশে  ফসলি জমি খনন করে পুকুর তৈরি করে। এদিকে ফসলি জমি ধ্বংস করা নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না প্রভাবশালীরা।

মূলত কৃষিজমির মালিকদের আর্থিক সুবিধার টোপ দিয়ে বাধ্য করছে মাটি খেকোরা। আর তাৎক্ষণিক নগদ টাকা হাতে পেয়ে আগামীর চিন্তা না করেই জমির টপ সয়েল বিক্রি করছেন কৃষকরা। আবার অনেক কৃষক মাটি খেকোদের পাল্লায় পড়ে অপরিকল্পিত ভাবে এক ফসলি, দুই ফসলি কিংবা তিন ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করেই পুকুর খননের জন্য দিয়ে দিচ্ছেন। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে এমন দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।

কৃষি জমি বাঁচাতে এবং গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলে নিরাপদ রাখতে এই ধরণের অবৈধ কর্মকান্ড দ্রুত রোধ করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন উপজেলাবাসী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা আঞ্জুমান বানু জানান, এ ধরনের অবৈধ পুকুর খননের  কোন সুযোগ নেই, যদি কেউ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads